তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

তা’মীরুল মিল্লাতের পথচলা ১৯৬৩ সালে দেশের প্রখ্যাত কয়েকজন শিক্ষাবিদ, সংগঠক, সমাজসেবক ও আলেমদের হাতে দিয়ে।শিক্ষা, গবেষণা ও সমাজকল্যাণ মূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতি গঠনের অবদান রাখার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গঠিত হয় তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট। ট্রাস্ট গঠনের শুরুতেই শিক্ষা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা। যা বর্তমানে দেশসেরা ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে অন্যতম। এবং তা’মীরুল মিল্লাত তিনটি পৃথক ক্যাম্পাস ও দুটি মহিলা শাখা ক্যাম্পাস মিলে এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ১৮হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

 আসুন মিল্লাতের অতীত থেকে ঘুরে আসি,
তা’মীরুল মিল্লাতের শুরুটা ছিল অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে। তৎকালীন ঢাকার অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এলাকা যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগে একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়। ১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর মাদ্রাসাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর সাহেব খ্যাত বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ:) ও প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর গোলাম আযম। সে সময়ে মাদ্রাসাটির বিজ্ঞান সম্মত সিলেবাস প্রণয়ন করার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন মরহুম নূর মোহাম্মদ আজমী ও সদস্য সচিব ছিলেন মরহুম মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ এর ধারাবাহিক তৎপরতার অংশ হিসেবে ১৯৭৭ সালে দাখিল, ১৯৭৯ সালে আলিম, ১৯৮২ সালে ফাজিল এবং ১৯৯০ সালে কামিল শ্রেণীতে উন্নীত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ ও বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়।
১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ট্রাস্ট পরিচালিত এই মাদ্রাসাটি সম্পর্কে খুব একটা জানতো না বললেই চলে। ১৯৮৩ এবং ১৯৮৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে তা’মীরুল মিল্লাত থেকে দুজন ছাত্র সারাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করে। তারপর থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হতে শুরু করে। তখন থেকেই সকলের কাছে পরিচিত হতে থাকে প্রিয় তা’মীরুল মিল্লাত। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে ট্রাস্টের বর্তমান সেক্রেটারি ও তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন এর দক্ষ পরিচালনায় পরিচালিত হতে থাকে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা। মহান আল্লাহর মেহেরবানীতে ১৯৮৬ সাল থেকে অদ্যবধি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র বোর্ড স্ট্যান্ড করার মাধ্যমে এবং সরকারের তরফ থেকে দেশ সেরা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি পেয়ে দেশ বিদেশে খ্যাতি লাভ করে।

▶ মিল্লাতের শাখা-প্রশাখা বিস্তারঃ
সেসময়ে মাদ্রাসাটির সুনাম অব্যাহত থাকায় শিক্ষার্থী সংখ্যা এত বেশি পরিমানে বেড়ে যাচ্ছিল যে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জায়গা দেয়া সম্ভব ছিল না, তখনই এ মাদ্রাসার শাখা খোলার প্রতি পরামর্শ প্রদান করা হয়। উদ্যোগ নেয়া হয় তামিরুল মিল্লাত টঙ্গী ক্যাম্পাস স্থাপনের। ১৯৯৭ সালে টঙ্গীর জামেয়া ইসলামিয়া ট্রাস্টের একটি ভাড়া ভবনে এর কার্যক্রম আরম্ভ হয়। তৎকালীন শিক্ষা সচিব ২০০১ সালে মাদ্রাসার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয়ে দেশের একমাত্র মাদ্রাসা শাখার অনুমোদন করে। এরপর থেকেই শুরু হয় তা’মীরুল মিল্লাতের নতুন এক বিষ্ময়কর পদযাত্রা। ২০০০ সালে সংগত কারণে মাদ্রাসা কতৃৃপক্ষ মহিলাদের জন্য তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা ক্যাম্পাস চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সায়দাবাদ এলাকার গোলাপবাগের একটি ভাড়া বাড়িতে শুরু হয় মহিলা ক্যাম্পাসের কার্যক্রম যা পরবর্তীতে মাতুয়াইলে নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয় এবং কামিল শ্রেণী পর্যন্ত চালু হয়। এখানেই থেমে নেই, সময়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের টঙ্গী ক্যাম্পাস এর পাশে পৃথকভাবে আরেকটি বালিকা মাদ্রাসা প্রাইভেট ভাবে চালু করা হয়, তা এখন কামিল পর্যন্ত চলমান রয়েছে। তা’মীরুল মিল্লাত মিরহাজিরবাগ ক্যাম্পাসেও ইতিমধ্যে পৃথক বালিকা শাখা চালু করা হয়েছে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তা’মীরুল মিল্লাত মাদ্রাসার সকল শাখা একজন অধ্যক্ষের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছিল। এ প্রতিষ্ঠানগুলো আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হবার পর বিধিগত কারণে প্রত্যেকটি শাখা পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। এছাড়াও তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাষ্টের অধীনে ১৯৬৩ সাল থেকে একটি এতিমখানা পরিচালিত হয়ে আসছে।

 তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা টঙ্গী ক্যাম্পাস
১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারিতে গাজীপুরের টঙ্গী পৌরসভায় জামিয়া ইসলামিয়া ক্যাম্পাসে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী শাখা শুভ উদ্ভোদন করা হয়। দেশের মাদ্রাসা অঙ্গনে একমাত্র প্রথম পূর্ণাঙ্গ শাখা প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে। অল্প সময়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় পরিনিত হয়ে উঠে টঙ্গী ক্যাম্পাস। দক্ষ ব্যবস্থাপনা আর তামিরুল মিল্লাতের সাবেক কৃতি ছাত্র, যারা এখানে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মূল ক্যাম্পাস এর মতই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে দ্যুতি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কামিল পর্যন্ত চালু রয়েছে। বিগত কয়েক বছর থেকে ক্যাম্পাসটি মাদ্রাসা বোর্ডের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে অবস্থান ধরে রাখছে।
বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা সাধারণ ও বিজ্ঞান বিভাগ মিলিয়ে প্রায় ৯,০০০। কামিল শ্রেণীতে হাদিস তাফসির ও ফিকহ বিভাগ নিয়ে মোট তিনটি বিভাগ চালু রয়েছে।